বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধানের বীজতলা। মাঠঘাট ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি চলে গেছে পানির নিচে। যার ফলে চারা দেওয়া খেতের ধান ভেসে যাওয়া ও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে কৃষকের মাঝে।
এছাড়া চারা দেওয়ার জন্য বীজ ধান প্রস্তুত থাকলেও, পানি ও বৃষ্টির কারণে বীজতলা বুনতে পারছেন না কৃষকরা। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাত থেকে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত ভারী বর্ষণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ধানের চারা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন চাষিরা। যার প্রভাব পড়বে বোরো উৎপাদনে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বাগেরহাটে ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো রোপণ করবেন কৃষকেরা। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। বাগেরহাটে মূলত নভেম্বরের শুরু থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বোরো মৌসুম চলে। বোরো রোপণের জন্য চাষিরা নভেম্বরের শুরু থেকে চারা তৈরির জন্য খেতে বীজ ধান বোনা শুরু করেন।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক পদ্মনগরের ইসলাম শেখ বলেন, সোমবার বীজ ফেলেছিলাম, চারা কেবল সামান্য বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু এখনতো চারার ওপর দেড় ফুট পানি। কি হবে জানি না।

পার্শ্ববর্তী গ্রামের শেখ রুস্তম বলেন, ১৮ কেজি বীজ ধান প্রস্তুত করেছিলাম চারা দেওয়ার জন্য। যে জমিতে বীজ বুনবো সেখানে এখন প্রায় ২ ফুট পানি। শনিবারের মধ্যে পানি না কমলে, আমার ৬ হাজার টাকার ধান একদম পানিতে ফেলে দেওয়া লাগবে।
শুধু রুস্তম-ইসলাম নয়, কয়েক হাজার চাষির অবস্থা একই রকম। তবে বৃষ্টিতে ঘেরের পাড়ের সবজি ও শীতকালীন সবজিতে তেমন প্রভাব পড়েনি।
অন্যদিকে আমন চাষিরাও শঙ্কায় রয়েছেন। বেশকিছু এলাকায় আধাপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে আমন ধান। ঝড় ও বৃষ্টির স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পেলে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।


শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী আমন চাষি রেজাউল গাজী বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রাতভর বৃষ্টিতে ধান একদম নুয়ে পড়ে মাটির সঙ্গে মিছে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে ধান। কি হবে জানি না।
আমন চাষি হারুন শেখ বলেন, কয়েকদিন হয়েছে ধান ফুলে বের হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান দাঁড়ানো রয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি বেশি হয়, তাহলে ধান ঘরে তোলা যাবে না।
মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের কৃষক প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ঝড়ে আমার খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একশর বেশি পেপে গাছ ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি গাছে ২৫ থেকে ৩৫ কেজি পেপে ছিল। এছাড়া সাম্মাম গাছেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বোরো ধানের বীজতলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এখনও সময় রয়েছে, কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। তবে ঘেরের পাড়ের সবজি ও শীতকালীন সবজিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। ঝড়ো বাতাস বৃদ্ধি পেলে আমন ধানের কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
Discussion about this post