ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। চলতি বছরে আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৯ হাজার ৪৫৯ জনই ভর্তি হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। বিনা মূল্যের সরকারি হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীর পেছনে সরকারের ব্যয় ৫০ হাজার টাকা। কোনো ডেঙ্গু রোগী তিন দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকলে ব্যয় হয় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির পর থেকে তার সুস্থ হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধপথ্য, পরিচর্যা—সবই দেওয়া হয় বিনা মূল্যে। মধ্যম সারির একটি বেসরকারি হাসপাতালে এমন রোগীর চিকিৎসা ব্যয় কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা। রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রথমেই ডেঙ্গু শনাক্ত ও নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষার মূল্য ১৫০ টাকা হলেও বাইরে প্রায় ১ হাজার টাকা। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে ইলেকট্রোলাইট, এসজিপিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। বাইরে এসব পরীক্ষায় ব্যয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। রোগীকে প্রায় ১০ ব্যাগ আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) দিতে হয়। এর বাজারমূল্য ১ হাজার টাকা। রোগীর শরীরে ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা ঠিক রাখতে ৫০০ এমএলের তিনটি অ্যালবোমিন দিতে হলে বাইরে এর দাম মোট ২৫ হাজার টাকা। রোগীকে প্লাটিলেট দিতে হলে এক ইউনিট প্লাটিলেট প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যয় হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা।
সূত্র আরও জানায়, রোগীর জটিলতা আরও বাড়লে এবং তাকে আইসিইউতে নিতে হলে চিকিৎসা ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। কোনো রোগী তিন দিন আইসিইউতে থাকলে তার পেছনে সরকারের ব্যয় হয় ৯০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে কনসালটেন্সি ফি হিসাবে আরও ২৫ হাজার টাকা যোগ হলে সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। শয্যাভাড়া, ওষুধ ও খাবারের দাম যোগ করলে এই ব্যয় ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় এ পর্যন্ত সরকারের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া একজন সাধারণ ডেঙ্গু রোগীর পেছনে সরকারের ব্যয় ৫০ হাজার টাকা এবং জটিল রোগীর পেছনে গড়ে ব্যয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যয়ের একটি হিসাব দিয়েছেন। তবে প্রকৃত ব্যয় এর চেয়েও বেশি।

আরও ১৭ মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম জানায়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের ১৬ জনই ঢাকার। একই সময়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৩০৮ জনের মধ্যে রাজধানীতে ৮৭৫ এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৪৩৩ জন।
চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে আগস্ট মাসে, ৭১ হাজার ৯৭৬ জন। আগস্টে মৃত্যু হয়েছে ৩৪২ জনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত ও মৃত্যুর ধারা আগামী অক্টোবর পর্যন্ত চলতে পারে।
Discussion about this post